অর্থসংকট
তুমি পুরুষ হয়ে জন্মেছো খোবায়েব।
তাই হয়তো ভেবেছিলে, তোমার কোন কলঙ্ক নেই।
কিন্তু তুমি একবারও ভাবলে না,
পুরুষের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক হলো অর্থসংকট।
অর্থসংকট ছাড়া পুরুষের এমন কোন পাপ নেই,
যে কারণে পুরুষ কোনকিছু থেকে বহিষ্কৃত হতে পারে।
নসিব আর হৃদয়
হৃদয়ের পছন্দ নসিবে গ্রাহ্য হয় নি।
আজও তার ছবি হৃদয়ের খোরাক হয়ে রয়,
যাকে নসিব নিজের করে লিখে নি।
স্পষ্ট হোক বা অনুমানযোগ্য,
নসিবের অগ্রাহ্যতাকেও হৃদয় তোয়াক্কা করে না।
ভালোবাসার মান
অভিমানের দেয়াল ছেদ করে একদিন তুমি ফিরবে।
তুমিও বুঝবে, ভালোবাসার মান অভিমানের মানের ঊর্ধ্বে।
প্রতিদিনের ন্যায় কোন এক গোধুলি লগ্নে আমি সূর্যাস্তের অপেক্ষায় থাকবো,
আর তুমি পেছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
আমি এমনভাবে সেখানে প্রতিদিন তোমার প্রতিক্ষায় থাকবো,
যেমন ইসরাফিল দাঁড়িয়ে আছেন সিঙ্গায় ফুঁ দেবার জন্যে।
অনন্ত স্মৃতি
সময়ের হিসেবে খুব অল্প মূহুর্ত আমরা একসাথে ছিলাম,
অথচ এই অল্পক্ষণেই স্মৃতি বানিয়ে ফেলেছিলাম অনন্ত।
আমাদের হায়াতের বাকি যতগুলো দিন পাবো,
এমনকি যদি আমাদের সময়ের বাহিরেও সুযোগ দেওয়া হয় —
আমরা সেসব স্মৃতি না ফের অনুভব করে শেষ করতে পারবো,
আর না গুণে শেষ করতে পারবো।
সব মানুষের একই মন্ত্র
আমি যতো মানুষ দেখেছি, সবারই মন্ত্র এক ছিলো।
সবাই বলতো, সব মানুষ এক নয়।
অথচ আমি যখন তাদের প্রত্যক্ষভাবে অনুধাবন করেছি,
আমি কোন তফাৎ খোঁজে পাই নি।
সবার মধ্যেই আমি স্বার্থ পূজা অবলোকন করেছি।
আমি দেখেছি, মানুষ বলতেই সবাই এক হয়।
যদি কেউ নিজেকে আলাদা প্রমাণ করতে চায়,
আমার মনে হয় সে প্রমাণ করতে চাচ্ছে,
সে ভিন্ন কোন এক প্রাণী, মানুষ নয়।
ত্যাগীদের অবহেলা প্রাপ্তির চক্র
ত্যাগ আর অবহেলা একে অন্যের পরিপূরক।
যে মানুষের জন্যে আপনি যতো বেশি বিসর্জন দিবেন,
আপনি সে মানুষের কাছে ততো বেশি মূল্যহীন থাকবেন।
যতোটা প্রখর হবে তার জন্যে আপনার ত্যাগ,
আপনাকে ঠিক ততোটাই অবহেলা করবে সে।
আপনার বেলাতেও এটা সেই মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,
যে আপনার জন্যে নিজেকে বিসর্জন দেয়।
যে মানুষ আপনার জন্যে ত্যাগী,
আপনিও কিন্তু তাকে অবহেলাই করেন।
নারী এবং পুরুষের ভালোবাসার তফাত
নারী হয়তো ভালোবাসা পাবার পর পরিবর্তন হতে পারে, তবে পুরুষ ভালোবাসা পাবার পূর্বেই পরিবর্তন হয়। একজন নারীকে ভালোবাসার পর, সে তোমার হওয়ার পর হয়তো তোমার পছন্দের কাজ করবে, তোমার অপছন্দের কাজগুলো উপেক্ষা করবে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে সেটা ভালোবাসা পাবার পূর্বেই হয়। সে তোমার কাছে আসার পূর্বেই তুমি যেন তাকে ভালোবাসো, সে আশায় তোমার পছন্দমতো হতে চাইবে, তোমার অপছন্দকে এড়িয়ে যাবে। নারীর ক্ষেত্রে পুরুষটি তাকে ভালোবাসলো কি না গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে সে নিজে ভালোবাসতে পারলেই হলো। তা বিপরীতের মানুষ ভালোবাসলে বাসলো কিংবা না বাসলে না বাসলো। ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসবে বিবেচনা করে পুরুষ ভালোবাসে না। এখানেই মূলত পুরুষ এবং নারীর ভালোবাসার অনন্ত, চিরন্তন তফাত।
ধরে রাখবার সাধ্য হলো না
ক্রন্দনরত স্বরে আমি বলেছিলাম,
ছেড়ে যেও না, এই একজীবনে আমার হয়ে থেকে যাও।
অথচ তুমি মেঘের গর্জনের আড়ালে আমার অনুনয় শুনলে না।
আমি বলেছিলাম,
অনিচ্ছা স্বত্তেও কতকিছু মেনে নিতে হয়,
মানুষ হয়ে জন্মানোর এই ধর্ম।
স্বেচ্ছায় ভালোবেসেছিলে, আজ না হয় বাসো না।
অনিচ্ছা হলেও আমার হয়ে থেকে যাও।
অথচ বৃষ্টির জলে একাকার হয়ে যাওয়া আমার অশ্রু তোমার দৃষ্টি অব্দি পৌঁছালো না।
তাই অবশেষে তোমাকে ধরে রাখবারও সাধ্য আমার হলো না।
ক্ষুদে চরিত্র
কতকাল পিরিতের পর অনুধাবন করলাম,
আমি তোমার কেউ হয়েও যেন কেউ না।
এযাবতকাল পৃথিবীর বুকে থেকে থেকে অনুভব করলাম,
আমি আবার পৃথিবীর জন্যেও খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ না।
তুমি কিংবা পৃথিবী —
দু'জায়গাতেই আমি গল্পের স্বার্থে ব্যবহৃত ক্ষুদে চরিত্র।
সৌন্দর্য এবং মনুষ্যত্ব
সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় তুমি হেরে যেতেই পারো,
তবে এটাই চূড়ান্ত হার নয়।
যখন তুমি মনুষ্যত্বের প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে,
তোমার ভেতরের সুপ্ত মানুষকে বাহিরে আসতে দিবে না,
সেটাই চূড়ান্ত হেরে যাওয়া।
আর পৃথিবীতে সৌন্দর্যে হেরে যাওয়া যতো না মানুষ,
মনুষ্যত্বের কাছে হেরে যাওয়া মানুষ তারও বেশি।