শতটুকরো হওয়া কাঁচ

তোমাকে ভালোবাসি


জন্মান্ধ মানুষও কোনদিন নিজেকে দেখে নি!
তবুও যখন কেউ তাকে বলে,
সরে যাও, মাথায় কংক্রিট পড়তে পারে।
জীবনের মায়া আছে বলেই সে সরে দাঁড়ায়।
সে অস্বীকার করতে পারবে না জীবনকে ভালোবাসে না।
আর আমি তোমাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
আমি তোমাকে না দেখতে পেলেই কোন সাহসে বলবো,
আমি তোমাকে ভালোবাসি না?



দাস


খোদা ভালোবেসে আমাদের নিয়ম দিয়েছেন,
আমরা যেন অবাধ্য না হয়ে যাই।
তিনি আমাদের এতো রহমত, নিয়ম দিয়ে কুরআন দিয়েছেন যে,
সমুদ্রের সমস্ত পানিকে কালি বানালেও তার বর্ণনা শেষ হয় না।
আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি,
অথচ আমার সামান্য কিছু বাঁধা নিয়মেই আমি বিষাক্ত হয়ে যাই।
খোদা ভালোবাসেন বলেই এত হুকুমে রাখেন,
আর তিনি তাঁর খানিকটা ভালোবাসা আমার হৃদয়েও দিয়েছেন।
তাই আমিও হারিয়ে ফেলার ভয় রেখেই এই নজরদারি করি।
অথচ তোমার মন যুগ নামক অদৃশ্য সত্তার দাস বলেই,
সত্য প্রেমকেও তোমার দাসত্ব মনে হয়।



বিলম্ব বোধ


অনিশ্চিত জীবন জেনেও মানুষ দুনিয়া সাজায়।
তোমার পাবো কি পাবো না এমন অনিশ্চয়তা নিয়েও আমি স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম,
তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।
মৃত্যু এসে দুনিয়া সাজানো ব্যক্তিকে নিয়ে গেলে,
এবং তৃতীয়পক্ষ এসে ভালোবাসাকে নিয়ে গেলেই কেন তবে মনে হয়,
এযাবতকাল সাজানো সবকিছুই ছিলো বৃথা?
মৃত্যু কিংবা ভালোবাসার পূর্বে কেন এই বোধ হয় না?



ভুলের জীবন


মায়া ভুলতে নিকোটিন,
দুঃখ ভুলতে অস্বাভাবিক ঘুমের ঔষধ।
ভুল থেকে বাঁচতে ভুলেরই দ্বারে।
হায় রে, ভুলের গোটা একটা জীবন!
কাটছে শুধু ভুলে ভুলেই।



শতটুকরো হওয়া কাঁচ


পিতার কোলে থাকা শিশুটিকে পিতা খেলার ছলে উপরে ছুঁড়েন।
শিশুটির ভরসা থাকে, নিচে পিতার হাত আছে।
তুমিও আমাকে বলেছিলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমার।
তুমিও যদি ভালোবেসে থাকো, আমার জন্যে কাঁচ হও।”
আমি তোমাকে বিশ্বাস করে কাঁচ হলাম।
এরপর আমি দেখেছিলাম, তুমি আমাকে উপরে ছুঁড়ে দিচ্ছো।
আমারও শিশুটির মতো তোমার হাতে বিশ্বাস ছিলো।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি আমাকে নিচে পড়ে যাওয়া থেকে আঁটকালে না।
তোমাকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে শতটুকরো হয়ে গেলাম।



মিত্রবেশী শত্রু


মিত্র না অথচ মিত্রের অভিনয় করো।
হে আমার মিত্রবেশে লুকিয়ে থাকা শত্রুগণ,
আমি তোমাদের আমার শত্রুর চেয়েও বেশি ভয় করি।
তোমাদের তীরের নিশানা সূক্ষ্ম হয় বেশি।
তোমাদের আঘাত শুধু আমার দেহে নয়,
পঙ্গু করে দেয় আমার আত্মাকেও।



আঁধারে হারিয়ে যাওয়া প্রেম


তুমি শীতের ঘন কুয়াশায় তীব্র বেগে ছুটে চলা বাহন।
আমি একলা-একা দাঁড়িয়ে আছি, তুমি আসবে।
নিয়ে যাবে আমাকে তোমার সঙ্গী করে।
অথচ কুয়াশা ভেদ করে তুমি চলে গেছো সরাসরি।
কুয়াশার তীব্রতা এতো বেশি ছিলো যে,
আমি তোমাকে ধরতে তো পারিই নি,
বরং তোমাকে দেখবারও সাধ্য হলো না।



ভুলতে সফল


পুরোনো কোন ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে দেখো।
যদি তবুও না পাও, মুছে গিয়ে থাকে ঘর্ষণে।
তবে এপিটাফে দেখে এসো আরেকবার।
সেখানেও যদি তুমি খোঁজে না পাও তারিখটা,
আমাদের শেষ কবে দেখা হয়েছিলো!
তবে ভেবো, আজ আমার মৃত্যু সফল।
আর তুমিও সফলভাবে আমাকে ভুলতে পেরেছো।



বিকল্প


একবার যে চলে যায় বহুদূর, সে ফেরে যদি আসে,
পূর্ণ ফেরে আসা আর হয় না কখনোই।
এরপরও সে শুধু বিকল্পভাবে থেকে যায়।
যেখানে গিয়েছিলো সে তোমার চেয়ে উত্তম ছিলো না,
তাই হয়তো এই ফিরে আসা।
দিনশেষে সে তাই তোমার গৃহে কোনঠাসা।
এরপর আরও উত্তম বিকল্প পেলে ফের চলে যাবে।



শক্তের ভক্ত


আমি মোমের মত নরম মন নিয়ে দেখেছি,
মানুষ অবহেলার উত্তাপে গলিয়ে দেয়।
আমি আমার মনকে পাথরে বাঁধিয়েও দেখেছি,
মানুষ শুধু একটু সঙ্গের জন্যে অনুনয়ও করে।
এরপর আমি বুঝতে শিখেছি,
মানুষ নমনীয়তায় আঘাত করে তৃপ্তি পায়।
আর শক্তে আঘাত করে যখন ব্যথা পায়,
তখন আবার শক্তের কাছেই যত্ন চায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন