কবিতাঃ বেওয়ারিশ

পথের ধারে ময়লার স্তুপে বেড়ে উঠা আমি এক ফুল,
উচ্ছিষ্ট, ফেলানো তোমাদের আদর খেয়ে খেয়ে পঁচে যায় ঘিলু জানো,
তবুও দায় চাপাও আমায় বেশি, যতটুকুই করি আমি ভুল।
তোমাদের বাবারা আপন করে ডাকে, কাছে আয় খোকা।
আমার তো বাবা নেই, পথের বুকেই হলো আশ্রয়,
তাই পথকেই মা মেনে প্রণাম করি আমি এক হাঁদারাম, বোকা।

তোমরা লড়ো মানচিত্রের রেখা টানাটানি নিয়ে,
আর আমি ভাবি, 
মানচিত্র কেবলই বেড়া, শেষে কি হবে তা দিয়ে?
পুরো পৃথিবী আমার, যেখানে খুশি যাবো, আছে স্বত্বাধিকার।
আটকাবে আমায় কে বলো? আছে সাধ্য কার?
তোমরা যাও ইস্কুলে, কপালে লিখো ভবিষ্যতের পাঠ,
আমি কুড়াই তোমাদের ফেলে দেওয়া কাগজ,
শুয়ে থাকি বুকে নিয়ে আস্ত ফাঁকা মাঠ।

তোমাদের মন খারাপে থাকে ডিজিটাল ডিভাইসের হাতছানি,
আমার মন খারাপে শুধু আকাশঢাকা মেঘ, মাটির গন্ধ, খোলা বাতাস জানি।
তোমরা যখন করো স্বার্থসিদ্ধির দ্বন্দ্ব,
আমি একবেলা ভাত পেলেই হয়ে যাই খুশি, অনুগত-বাধ্য।
একবেলা খাইয়ে করিয়ে নাও কত অশুভ পাপ,
আজ না হোক কাল, মনে রেখো পোহাতে হবে এরই দগদগে তাপ।

জানি না কার দোষে জন্ম আমার, কোন ভুলের ফসল।
তবু বেওয়ারিশ জন্মে ভালোই হলো,
জেনে নিলাম মানুষের রূপ আসল।
পথেই জন্ম, পথেই হবে বিনাশ জানি।
আক্ষেপ রেখে যাই শুধু, কোন পোড়ামুখীর গর্ভে জন্ম আমার,
যদি দেখতে পারতাম একবার তাঁর মুখখানি।

- বেওয়ারিশ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন