নিজের ফাঁসি

ব্যতিক্রম রইলো কি


স্রষ্টা বানাইলো আমারে তাঁহার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে,
অথচ আমি মানুষের প্রেমে মশগুল রইলাম।
সুখের কালে কতো মানুষ দেখিলাম,
দুঃখের কালে এই আসমান ছাড়া আর কারো সঙ্গ নাহি পাইলাম।
সুসময় ছাড়া মানুষ আমারে খুঁজলো না,
আমিও দুঃসময় ছাড়া স্রষ্টাকে খুঁজলাম না।
এরপর মানুষের থেকে যতো যন্ত্রণা পাইলাম,
তা নিয়া আবার স্রষ্টার কাছে নালিশও রাখিলাম।
আমি যে তাহাদের স্বার্থপর বলিয়া আখ্যায়িত করিলাম,
স্রষ্টার কাছে আমার ব্যতিক্রম রইলো কি?



নিজের ফাঁসি


দেহ ঝুলে আছে তার গামছার ফাঁসে,
আত্মা ঝুলে আছে তার প্রেমিকার ওড়নায়।
দীর্ঘদিন নিজেকে তার বলে পরিচয় দিতো প্রেমিকা,
আজ আবার প্রেমিকাকে কে যেন ছুঁয়।
তাই আত্মা তার ডুবেছিলো প্রায় নিজ অশ্রুর বন্যায়।
অবশেষে নিজেই নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলালো,
বেসেছিলো ভালো, এই ছিলো তার অন্যায়।



থেকে যাওয়ার ইচ্ছে


রেখে দেওয়ার ইচ্ছেটা যতোটা জরুরী।
তার চেয়ে বেশি জরুরী থেকে যাওয়ার ইচ্ছেটাও।
যে চলে যাবে নিয়তে একবার মনস্থির করে ফেলেছে,
তাকে আসমান-জমিন একত্রে গুছিয়ে দিলেও,
সমস্ত সৃষ্টিকূলের সুফল তাকে একত্রে ভোগ করতে দিলেও,
সে থেকে যাবে না।






জোড়া ভাঙা বাবুইপাখি


তোমার জন্যে আমার কতো ভালোবাসা আর আছে বেঁচে,
জেনেই বা আর কি করবে শুনি?
ভালোবাসার পরিমাপক আবিষ্কার হয় নি আজও।
তবে এটুকু বলতে পারি শুনো,
যদি ভালো নাই বাসি, তবে কেন বলো?
জোড়া ভাঙা বাবুইপাখি হয়েও একলা একা ঘর বুনি।



প্রেমহীনতার কালো দাগ


সেই কবে একবার আমি একগাল হেসেছিলাম,
সেই কবে তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে।
এরপর ভালোবাসো নি আজ বহুদিন,
বহুদিন আমার চেহারায় হাসির ছাপ আসে নি আর।
আবার হাসবো তোমার সাথে, সে প্রতিক্ষায় দিন কাটাই।
অথচ দিনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাত মেনে নেয় না।
বিশ্বাস না হলে চোখের নিচে দেখো,
ভেসে যায় স্পষ্ট প্রেমহীনতার কালো দাগ।



সম্পর্ক


একসাথে দুটো গোলাপের চাড়া কেনা হলো,
এরপর দুটোর মধ্যে দুভাবে পরীক্ষা করা হলো।
একটি গোলাপ চাড়া যত্নে রাখা হলো,
সময়মতো আলো আর জলও দেওয়া হলো।
অন্য আরেকটি চাড়ার কোন খোঁজ নেওয়া হলো না,
আলো, জল দেওয়া হলো না, যত্ন নেওয়া হলো না।
পরক্ষণে দেখা গেলো,
যত্নে রাখা গোলাপ চাড়া সুন্দরভাবে বেড়ে উঠলো,
কি সুন্দর সুভাস ছড়ানো গোলাপ ফুলের সহিত।
আর অযত্নে রাখা গোলাপ চাড়া যত্নের অভাবে মরে গেলো।



স্থিরতা মূল্যহীন


যে বাহন স্থির দাঁড়িয়ে থাকে,
সে বাহনে কেউ চড়ে না, এটা মূল্যহীন।
যে জীবন ভবিষ্যতে অগ্রসর হয় না।
শোকে, দুঃখে থেমে যায়, স্থির দাঁড়িয়ে থাকে,
সে জীবনও মূল্যহীন।
সে জীবনে কেউ হাত ধরে পাশে থেকে যায় না,
পাশাপাশি থেকে চালিয়ে নেবার মতোও কাউকে পাওয়া যায় না।
বাহন হোক বা জীবন স্থিরতায় মূল্যহীন।



ভালো থেকো


অজস্র কথামালা, মুগ্ধকর অনুভূতি দিয়ে সূচনা হয়।
কতো প্রেম, প্রতিশ্রুতি, অনুভব নিয়ে বহমান হয়।
আর শেষ হয় নির্বাক, অনুভূতিহীন হয়ে।
বেশির ভাগ প্রেমের উপসংহারে থাকে কেবল,
“ভালো থেকো, এ পর্যন্তই ছিলো আমাদের পথচলা”,
“তুমিও ভালো থেকো, আমার আর বলার কিছু নেই”!



মূল্যহীন অনুভূতি


আমি কোনকালেই এতোটা অবজ্ঞার পাত্র ছিলাম না।
তোমার সাথে একটা সুন্দর জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম,
চেয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে সাজাবো স্বপ্নসম সংসার।
তোমাকে আমার করে পেতে আমার যত আর্তনাদ ছিলো,
তোমার কাছে তা ছিলো মূল্যহীন অনুভূতি।
নিখাঁদ সস্তা মানুষের মূল্যহীন অনুভূতি।



প্রয়োজনের শেষে


যৌবনের পছন্দ চুল, প্রেমের পছন্দ ফুল।
যৌবন ফুরিয়ে গেলে চুল না থাকাতেও অভাববোধ হয় না,
প্রেম ফুরিয়ে গেলে ফুল শুকিয়ে গেলেও আক্ষেপ হয় না।
তেমনই প্রয়োজন অব্দিই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক।
প্রয়োজন ফুরিয়ে এলে কেউ আর ফিরেও তাকায় না।



অবাধ্য বান্দা এবং তুমি


আমি জানি তুমিও অনুধাবন করতে পারো,
তোমার আর আমার পায়ের দূরত্ব বাড়ছে কতটুকু।
যেভাবে অবাধ্য বান্দা টের পায় খোদা তায়ালার দূরত্ব,
কতটা দূরত্বে সে ক্রমশ সরে এসেছে।
কিন্তু তুমি ফিরতে চাইছো না,
কিংবা চাইলেও আর ফিরতে পারছো না।
যেমন জেনে বুঝেও নফসের ধোঁকায় থাকে অবাদ্য বান্দা,
চাইলেও আর সাড়া দিতে পারে না খোদার ডাকে।

إرسال تعليق

أحدث أقدم